শীতকালে সর্দি-কাশি সমস্যা?


সতর্কতা

শীত কিন্তু দরজায় প্রায় কড়া নাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে সর্দি-কাশি আর ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। এই শীতকালীন সর্দি-কাশি সম্পর্কে আমাদের অনেকের মধ্যেই রয়েছে ভয় আবার অনেকের মধ্যেই রয়েছে অনেক ভ্রান্ত-ধারণা। আমাদের অনেকেই এ সময়ে সামান্য সর্দি-কাশি হলেই দারস্থ হন নিকটস্থ ফার্মেসির। কেউ কেউ আবার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই গ্রহণ করেন বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ওষুধ। কিন্তু কতটুকু যুক্তিযুক্ত  এ ধরনের প্রবণতা। সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই নেই সঠিক ধারণা। তাই আসুন জেনে নিই শীতকালীন সর্দি-কাশি সম্পর্কে কিছু কথা এবং নিজেকে প্রস্তুত করি অনাকাক্সিক্ষত অসুস্থতার হাত থেকে।

শীতকালে সর্দি-কাশি কেন হয় :

শীতকালে ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সর্দি-কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এসব ভাইরাসের ভেতর রাইনোভাইরাস অন্যতম। প্রায় ২০০-এর বেশি ভাইরাস রয়েছে যেগুলো এ ধরনের সংক্রমণের জন্য দায়ী। শীতকালে ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে আমরা সাধারণত অধিক সময় ঘরের ভেতর থাকতে পছন্দ করি যার ফলে আমরা অন্যান্য মানুষের সংস্পর্শে বেশি আসি এবং ভাইরাস একজন থেকে অন্যজনে সহজেই ছড়াতে পারে। এ ছাড়া শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে, সর্দি-কাশির জন্য দায়ী ভাইরাসগুলো কম আর্দ্রতায় অধিক হারে বংশবৃদ্ধি করে এবং অধিক হারে মানুষকে আক্রান্ত করে। একজন মানুষ আক্রান্ত হলে তার নিকটজনও আক্রান্ত হতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাস আক্রান্ত শীতকালীন সর্দি একটি ছোঁয়াছে রোগ। এটাকে আপার রেসপিরেটরি ট্রাকট ইনফেকশন বলা হয়।


একজন আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে নিজের হাতে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন এবং পরবর্তীতে ওই হাতে কোনো ব্যবহার্য জিনিস স্পর্শ করলে সেখানেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই পরিবারের সবাই ব্যবহার করে এমন জিনিস যেমন- জগ, গ্লাস, পানির কল ইত্যাদি ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন অথবা ব্যবহারের পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ভালোভাবে ঢেকে নিন এবং পরবর্তীতে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলুন।


সর্দি-কাশি নিরাময়ে এন্টিবায়োটিক কতখানি কার্যকর

এন্টিবায়োটিক এমন একটি ওষুধ যা তৈরি করা হয়েছে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে সৃষ্ট অসুখ নিরাময়ের জন্য। অর্থাৎ এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া নিধনে কার্যকর একটি ওষুধ। কিন্তু ভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট অসুখ নিরাময়ে এর কোনো কার্যকর ভ‚মিকা নেই। সাধারণ সর্দি-কাশি ভাইরাসজনিত একটি রোগ হওয়ায় এটি নিরাময়েও এন্টিবায়োটিকের কোনো কার্যকর ভ‚মিকা নেই। তাই সর্দি-কাশি নিরাময়ে কোনো ধরনের এন্টিবায়োটিক গ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কেননা এতে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়, কারণ অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে এবং সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স তৈরি হয় যা পরবর্তী সময়ে এই ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটায়।
তবে সর্দি-কাশির সঙ্গে তীব্র জ্বর থাকলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

সর্দি-কাশি নিরাময়ে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি :

০. সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে বেশি করে তরল খাবার খান। যেমন- পানি, আদা চা, ফলের জুস ইত্যাদি পান করলে নাক বন্ধ হয়ে থাকা ভাব কমবে।
০. তরল খাবারের ভেতর পানি পানে জোর দিতে হবে বেশি। দৈনিক অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এ ছাড়া গরম স্যুপ খেলে উপকার পাবেন।
০. গরম পানির ভাঁপ নিতে পারেন। এক গামলা গরম পানি নিয়ে নাক দিয়ে বাষ্প টানুন, এতে নাক বন্ধ হয়ে থাকা এবং নাক দিয়ে পানি পড়া কমবে। তবে সাবধান থাকবেন বাষ্প অতিরিক্ত বা অসহ্য গরম মনে হলে ধীরে ধীরে টানুন।
০. শরীর উষ্ণ রাখুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুন। শরীর উষ্ণ রাখতে গরম জামা বা কম্বল গায়ে জড়িয়ে রাখতে পারেন।
০. লেবুর রস এবং মধুমিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করুন। দুই কাপ গরম পানিতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং এক চা চামচ মধু মেশান। মিশ্রণটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করে সেটি দিয়ে গড়গড়া করুন।
০. উষ্ণ তরল পানি পান করুন। গরম চায়ের সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন, এতে শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের পথ পরিষ্কার হবে।
০. কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।
০. নাক বন্ধ থাকার কারণে ঘুমাতে অসুবিধা হলে মাথার নিচে একটি অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করতে পারেন, এতে আপনার নিঃশ্বাস নিতে সুবিধা হবে।

কীভাবে সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করবেন :

সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করতে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। নিয়মিত সঠিক নিয়মে হাত ধুবেন। এর ফলে সর্দি-কাশিতে  আক্রান্ত হওয়ার এবং ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ কম থাকে। যারা দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের অসুখে ভুগছেন (যেমন- হাঁপানি, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, পুরাতন টিবি, আইএলডি ইত্যাদি জাতীয় অসুখ) তাদের জন্য শীতকালীন সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ ভাইরাল সংক্রমণে এ জাতীয় অসুখের তীব্রতা অনেক ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দেয় এবং ঘন ঘন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয় বা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তাই এ ধরনের রোগীদের সতর্কতার পাশাপাশি বছরে প্রতি নভেম্বরে একটি করে ফ্লুসট (ভেক্সিন) নেওয়া উচিত।
সর্বোপরি শীতকালীন সর্দি-কাশি মারাÍক কোনো রোগ নয়। তাই এ নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই, তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা এবং স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে ব্যাহত করে। তাই সচেতন হোন এবং শীতকালীন সর্দি-কাশি খুব সহজেই প্রতিরোধ করন।