জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীন দেশে যাও- কথাটি কী সঠিক?


জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীন
দেশে যাও- মূল বাক্যটি আরবিতে বলা হয়
এবং এই আরবি বাক্যটি ব্যাপকভাবে হাদিস
হিসাবে প্রচলিত। প্রকৃত পক্ষে এটি হাদিস
নয় বরং পরবর্তীকালের কোনো মুসলিম
মণীষীর বাণী। তবে সন্দেহ নেই যে,
বক্তব্যটি সঠিক ও বাস্তবসম্মত। ইলমে দ্বীন
হাসিলের জন্য যত দূরের সফরই হোক,
তাওফিক হলে করা উচিত। ইলম
অন্বেষণে কখনো মেহনত-মুজাহাদকে ভয়
পাওয়া উচিত নয়। তদ্রূপ পার্থিব
জীবনে প্রয়োজনীয় শিল্প ও
বিদ্যা শিক্ষার জন্যও দূর দূরান্তে সফর
করা জায়েয; বরং তা একটি পর্যায় পর্যন্ত
কাম্যও বটে।
এই সকল কিছু স্বস্থানে বিদ্যমান
আছে এবং শরিয়তের বিভিন্ন দলিল
দ্বারা তা প্রমাণিত এবং ইলম বা জ্ঞান
অর্জন করার মানসিকতা বৃদ্ধি করার জন্য
উতসাহব্যঞ্জক এমন কথার গুরুত্বও রয়েছে।
কিন্তু আলোচ্য বাক্যটি হাদিস নয়। যদিও
তা হাদিস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে,
কিন্তু এই বাক্যটি হাদিস হিসেবে বর্ণনার
সনদে আবু আতিবা তরিফ ইবনে সুলায়মান
নামক একজন রাবি(বর্ণনাকারীর)নাম
আছে রয়েছে; হাদিস শাস্ত্রের
ইমামগণের দৃষ্টিতে যিনি মতারূক
(পরিত্যক্ত)। তাকে হাদিস জাল করার
অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সুতরাং হাদিস জাল করার
অভিযোগে অভিযুক্ত
কারো বর্ণনাকে হাদিস হিসেবে গ্রহণ
করার যৌক্তিকতা ইলমে হাদিস
শাস্ত্রে নেই।
আর রিহালাতু ফি তালাবিল ইলম নামক
একটি আরবি কিতাবের মাঝে এই
উক্তিটিকে হাদিস হিসেবে উপস্থাপণ
করার জন্য যে কয়টি সনদ ব্যবহার
করা হয়েছে তার সবকটি সনদই হাদিস
শাস্ত্রের বিচারে দূর্বল এবং এই গ্রন্থ
লেখক নিজেও বর্ণনার
শেষে এসে স্বীকার করেছেন
যে এটি একটি দূর্বল বর্ণনা।
শেষ কথা হলো-
ভালো যে কোনো কথাই ভালো, সত্য
যে কোনো কথাই সুন্দর। তাই বলে সব
ভালো এবং সত্য কথাকেই যে হাদিস
বা রাসুলের
কথা বলে চালিয়ে নিতে হবে, এমন কথার
স্বীকৃতি ইসলাম দেয়নি।
দেখুন- রিজাল ও রেওয়ায়েত-শাস্ত্রের
বিখ্যাত ইমাম আবু জাফর উকাইলি লেখেন-
(আরবী) -আয-যুআফাউল কাবীর,
উকাইলী ২/২৩০; কিতাবুল মাজরূহীন,
ইবনে হিব্বান ১/৩৮২; মিযানুল ইতিদাল
২/২৫৮; আলমুনতাখাব মিনাল ইলাল লিল-
খাল্লাল ইবনে কুদামাহ পৃ. ১২৯-১৩০;
আলমাকাসিদুল হাসানাহ, সাখাভী পৃ. ১২১

0 Comment " জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীন দেশে যাও- কথাটি কী সঠিক? "